লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:  
১২ বছর বয়স পূর্তির পূর্বে জীবন ও শিক্ষা অর্জনের প্রারম্ভিক বছরগুলো  শিশুদের জীবন গঠনের দিক থেকে নিঃসন্দেহে একটি নাজুক বা  সংবেদনশীল পর্যায়। এ সময়ে তাদের চিন্তা ও চেতনায় যদি ভুল  আক্বীদাহ ও মূল্যবোধ প্রোথিত হয়, তাহলে জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত  সেটা অবলোপন করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। পিতা-মাতা,  শিক্ষক-অভিভাবক আমরা, যারা দৃঢ় ঈমান নিয়ে সীরাতুল মুসতাক্বীমের  পথে এগিয়ে যাওয়া কামনা করি, তারাও অনেকেই মারাত্মক রকমের ভুল  করে চলেছি। আমরা ‘আধুনিক শিক্ষা’ ‘আলোকিত জীবন’ প্রভৃতির  চিত্তাকর্ষক আহ্বানে বিভ্রান্ত হয়ে ঈমান আক্বীদাহ বিবর্জিত এবং ইসলামের  সাথে সাংঘর্ষিক চেতনা সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ব্যবস্থা এবং তাদের কাছ  থেকে পাওয়া বিপুল বই, সাহিত্য এবং তাদের চিন্তা-চেতনা সৃষ্ট বিষয়বস্তু  কোন প্রকার বাছ-বিচার ছাড়াই আমাদের সন্তানদের জন্য উন্মুক্ত করে  দিয়েছি। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে ধর্মান্তরিত ইউরোপীয় মনীষী  মুহাম্মদ আসাদ এ সমস্যাটিকেই তাঁর লেখনীতে তুলে ধরেছিলেন এভাবে:  

“Except in rare cases, where a particularly brilliant mind may triumph over the educational matter. Western  education of Muslim youth is bound to undermine their  will to believe in the message of the prophet, their will  to regard themselves as representatives of the religiously motivated civilization of Islam.” 
(পৃষ্ঠা-৬৩, Islam at the crossroads, আসাদ)
সংগত কারণেই সম্ভাব্য এ বিপর্যয় এড়াতে পাশ্চত্য সাহিত্য, মূল্যবোধ,  কৃষ্টি, নৈতিকতা (মূলত অনৈতিকতা) প্রভৃতির শ্রেষ্ঠত্বের অমূলক ধারণা  তাদের অপরিপক্ক অথচ নিষ্কলুষ ও দূষণমুক্ত মস্তিষ্কে অনুপ্রবেশ করার  আগেই সেখানে আল্লাহ তা’আলার দ্বীন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম) এর সুন্নাহ সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণার ভিত গড়ে দিতে হবে। আমরা, শিশুদেরকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, কুরআনের আরবি শিক্ষা  এবং তাজবীদ (শুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত) প্রশিক্ষণ দেব  ইনশা’আল্লাহ! সাথে থাকবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পরিবেশ বিজ্ঞান  এবং সামাজিক বিজ্ঞান। অষ্টম শ্রেণীর পর আগ্রহ অনুযায়ী নিম্নের ভাগে বিভক্ত হবে

১) এস এস সি
২) দাখিল
৩) কারিগরী (ভকেশনাল) 

ইনশা’আল্লাহ! এস এস সি (বা সমমানের) পাশের সাথে সাথে কুরআনের (সম্পুর্ণ বা সর্ব নিম্ন ৫ পারার) হাফিজ হবে। আরবী ও ইংরেজী ভাষায় কথা বলাসহ কুরআন বুঝে বুঝে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।

সময়ের সাথে সাথে একটি করে ক্লাস বৃদ্ধি  করতে করতে, আমরা ইনশা’আল্লাহ দশম শ্রেণি পর্যন্ত এবং উৎসাহ পেলে আরও বিস্তৃত করে উচ্চতর শিক্ষার বিষয়েও পদক্ষেপ অব্যহত থকবে  ।  এখানে শিক্ষার মাধ্যম হবে বাংলা, আরবী ও ইংরেজী । বাংলা ও ইংরেজীর সাথে কুরআনের আরবি ভাষাও যথাযথ গুরুত্ব সহকারে শিক্ষা দান করা হবে ইনশা’আল্লাহ্, যাতে  শিক্ষার্থীরা সময় ও পরিবেশের চাহিদা ও প্রয়োজনের উপযোগী হয়ে গড়ে  উঠতে পারে। কুরআন-হাদীস এবং সম্ভাব্য সকল ইসলামি উৎস থেকে  আমরা পাঠ উপকরণ সংগ্রহ করতে চেষ্টা করবো। ইতিহাস পড়াতে  আমরা প্রথমেই বেছে নেব ইসলামের সোনালী অতীত। একইভাবে,  পরিবেশ বিজ্ঞানের বেলায় আমরা আল-কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা যে সমস্ত  নিদর্শনের উল্লেখ করেছেন, সেগুলোকে সম্পৃক্ত করে পাঠদান করবো।  এভাবে আমরা চাইবো ১২ বছর বয়সে পৌঁছানোর পূর্বেই শিশু যেন  ইসলামি জ্ঞান ও মূল্যবোধের একটি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যায়।

দেশের পরিবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা অনুযায়ী, আমরা পিইসিই, জেএসসি এবং  এসএসসি-পর্যায়সমূহকে সামনে রেখে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জাতীয়  কারিকুলামের অনুবর্তী করে তুলব, যাতে তারা হালাল কর্মসংস্থান ও  পরিচ্ছন্ন জীবন নির্বাহের সংগ্রামে সফলভাবে আত্মনিয়োগ করতে পারে।  আমরা বাংলাদেশে বসে তাদের যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের স্বপ্ন দেখাবো না।  সবাইকে ছেড়ে একা ভালো থাকার স্বার্থপর স্বপ্ন নয়; বরং আল্লাহ্ তাঁর  “ক্বদর” অনুযায়ী যে আমাদের, বহু নিয়ামতের এই ভূ-খন্ডে জন্ম  দিয়েছেন-সেজন্য শুকরিয়া জানিয়ে, এই ভূখন্ড নিয়ে ভালো থাকার স্বপ্ন  দেখাবো ইনশা’আল্লাহ!